সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয় 



আর জি কর হাসপাতালের ট্রেইনি ডাক্তারের নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে প্রদর্শন চলছে । মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে । "উই ডিম্যান্ড জাস্টিস" । শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ, পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও নানা প্রদেশে , বিদেশে প্রদর্শন করছেন । "উই ওয়ান্ট জাস্টিস" । শিল্পী মানুষ, সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এই নারকীয় ঘটনায় তৎসহ প্রমাণ লোপাটের প্রচেষ্টা ও প্রশাসনের জড়িয়ে থাকার আভাস পাচ্ছেন মানুষ। পুরো ঘটনায় সি বি আই ও সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত ও বিচারের প্রচেষ্টা করছেন । 

"বিচার বিলম্বিত হলে ন্যায়বিচার অস্বীকার করা হয়" প্রবাদটি ইতিহাসের করিডোরে প্রতিধ্বনিত হয়েছে, এই মৌলিক নীতির একটি কালজয়ী উদাহরণ যে বিচার প্রক্রিয়া অযথা স্থগিত করা উচিত নয়। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, আইনি জটিলতা এবং রাজনৈতিক কৌশলগুলির জটিলতার সমীকরণ একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে পারে । সঠিক সময়ে বিচার পাওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে ।

বিচার ব্যাবস্থায় প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য খুবই সংবেদনশীল। রাজনীতিবিদরা, নির্বাচনী কৌশল বা ব্যক্তিগত এজেন্ডা দ্বারা অযথা প্রভাব ফেলতে পারে। এটিকে আমরা ভয় পাচ্ছি।  এবং এটা সত্য যে আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় পরিষ্কার, কোন প্রত্যক্ষ সাক্ষী সামনে না আসা খুব চিন্তার বিষয়। এখানে নিশ্চিত ভাবে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে । মানুষ কথা বলতে ভয় পাচ্ছে ।  

জাতি হিসাবে বাঙালির অবক্ষয় একটা বড় নির্দেশিকা হিসাবে মানুষ নিচ্ছেন । পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অন্যান্য বাঙালিদের কাছে একটা হতাশার বিষয় । অন্যান্য জাতির কাছে বাঙ্গালিদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াকে সন্দেহের চোখে দেখছেন । বাংলার বাঙালির মেধার অবক্ষয়, মানবসম্পদের কুব্যাবহার নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ সোচ্চার ।  

অথচ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়, সেই সময়কার নেতা গোপাল কৃষ্ণ গোখলের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বক্তব্য ছিলো - ""what Bengal thinks today, India thinks tomorrow.": "বাংলা আজ যা ভাবছে, ভারত আগামীকাল তাই ভাববে " । এই দাবিটি, তাঁর সময়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নিহিত ছিলো । বাঙালি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে একটা লিডিং অবস্থায় ছিলো । বাংলা ছিল একটি সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিশালী উদ্দোক্তা, যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলো ।  এই অঞ্চলের বুদ্ধিজীবীরা, যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ,স্বামী বিবেকানন্দ, সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। বাংলা কর্মসূচীর জয়জয়াকার শুধু পশ্চিমবঙ্গে আবদ্ধ ছিলো না। আজকের যুগে বাঙ্গালি জাতির চরম অবক্ষয়ে, পূর্বপুরুষদের বিশ্বাস ও চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা ব্যর্থ ।  বাঙ্গালির নেতৃত্ব দেবার কোন ইচ্ছাই যেন আর নেই ।

সামগ্রিক ভাবে, আজকের আর জি করের ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । বাংলার অবদান দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের বিজ্ঞান, ক্রীড়া, গণিত, রাজনৈতিক নেতৃত্বে, সাহিত্যে, সিনেমায়, সামরিক বাহিনী, ব্যবসা বাণিজ্যে অবনমনের দিকে । বাঙালি মেধার অবনমন হচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে সমস্ত বাংলার মানুষ ।  একটি সুন্দর বাংলা রাজ্য আমাদের কাঙ্ক্ষিত ।  আমরা চাই, গোপাল কৃষ্ণ গোখলের উক্ত বক্তব্যটি আবার আলোচনায় ফিরে আসুক । 

 


পাঠকের মতামতঃ